Thursday 3 August 2023

আতঙ্কিত রাতের কথা

বিপাশা একা একা বাড়ি ফিরছিল।
সে কয়েক বছর বাড়ির বাইরে মানে শহরে গিয়েছিল তার চাকরির ট্রেনিং এর জন্য,আজ ট্রেনিং শেষ হতেই তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরতে গিয়ে ট্রেন টা লেট করলো আর দেরি হয়ে গেলো।
এখন প্রাই রাত ১০ বাজে,রাস্তাঘাট নির্জন ছিল,কেউ কোথাও নেই শেষ বাসে করে বাড়ির রাস্তায় তাকে নামিয়ে দিলো।এখান থেকে
তার বাড়ি প্রাই ১৫ মিনিট হাটতে হয় কিন্তু এতো টা পথ কোনো জনমানস নেই একা একা অনেক দিন পর সে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল কিন্তু এইসব চিন্তা করতেই সে একমাত্র শব্দ শুনতে পাই তা হল পাতার গর্জন।সে ভয় পেলো বুকটা তার ভাড় হয়ে এলো,সে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ শুনতে পেল কেউ তার নাম ধরে ডাকছে।তার হাত ঠান্ডা হতে লাগলো,ডিসেম্বর মাসের ঠান্ডা একটুও হাওয়া নেই তাও সে ঘেমে উঠলো।
এইসব এর মধ্যে সে তার নাম টা শুনতে পেলো খুব চেনা কণ্ঠে।
(আনবিক)
বিপাশা ওই বিপাশা কি রে দাড়া দাড়া একটু ওই..
সে বুঝতে পেলো তার পুরানো বন্ধু,আনবিক,যাকে সে কয়েক বছরের পর বছর দেখেনি।এবার সে একটু গা ছমছম ভাব টা কাটিয়ে উঠলো!
আনবিক তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো -
এতো দিন পর এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস!
বিপাশা ব্যাখ্যা করে বললো যে সে বাড়ি যাচ্ছে,
বিপাশা বললো - এইতো আজ ই আমার ট্রেনিং শেষ হলো তাই আর দেরি না করে বাড়ি চলে আসলাম কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আজই ট্রেন টা লেট করলো তাই আমার বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেলো।
আনবিক তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিলো,
আনবিক বললো - চল আমি তোকে পৌঁছে দিই তোর বাড়ি এতটা পথ তুই একা যাবি..
বিপাশা তার পুরানো বন্ধুকে দেখে খুশি হয়েছিল এবং তার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।
বিপাশা বললো - বা! এটা ভালোই হয়েছে একটু গা ছমছম করছিল ঠিকই সত্যিই তুই আছিস এখন আর চিন্তা নেই,গল্প করতে করতে সময় কেটে যাবে,চল তাহলে!
তারা পুরানো সময়ের কথা বলেছিল এবং একে অপরের জীবনের কথায় সাথে জড়িয়ে গেল।

আনবিক তাকে বলছিল যে সে শহরে ফিরে গেছে এবং এখন একটা দোকানে কাজ করছে।চাকরি পাইনি তাই এই অবস্থা নিজেকে চালাতে গেলে কিছু তো করতেই হয়।
বিপাশা বললো - ভালো করছিস শুনে খুশি হলাম।
তারা যখন বিপাশার বাড়ির কাছাকাছি প্রায়ই চলে এসেছিল,তারা লক্ষ্য করল যে কিছু একটা ভুল হয়েছে।রাস্তার আলো জ্বলছিল কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর নীরবতা ছিল সেখানে। আনবিক বিপাশা কে সাবধানে থাকতে বললো এবং ব্যাপার টা ঠিক কি সেটা যাচাই করতে গেলো।
আনবিক বললো - তুই দাড়া একটু আমি ব্যাপার টা একটু দেখে আসি অসুবিধা হবে না,আমি আসছি!
কয়েক মিনিট পরে,বিপাশা একটু এগিয়ে যেতেই বিকট শব্দ শুনতে পেল,তারপরে একটি বেদনাদায়ক আর্তনাদ।
বিপাশা ছুটে গেলো যেখানে আণবিক ছিল,শুধুমাত্র তাকে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখতে পায়।
বিপাশা আতঙ্কিত হয়ে উঠল এবং তাকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল,কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।আণবিক মারা গিয়েছে।
বিপাশা হতবাক হয়ে পড়ল,সে এখন কী করবে বুঝতে পারছিল না। সে কিছুক্ষণ পর তার থমথমে ভাব টা কাটিয়ে তার বাড়ির পাশের মানুষদের কে জানালো ব্যাপারটা,
সেখান কার মানুষেরা পুলিশকে ডাকা হলো,এবং আনবিক এর দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো,বিপাশা ও সাথে গিয়েছিল।
ও দিকে অফিসাররা ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে আণবিক একজন অজ্ঞাত আততায়ীর দ্বারা আক্রমণ ও হত্যা হয়েছে।
সেদিন রাতের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী জানাযায় যে আনবিক বিপাশা র সাথে দেখা হওয়ার প্রায় আধঘন্টা আগে নিহত হয়েছে।
বিপাশা এমন খবর শুনে হতবাক হয়ে গেলো
সে ভাবলো - এটা কি করে সম্ভব,!নিশ্চয়ই ডাক্তারের রিপোর্টে কোনো ভুল হয়েছে,
বিপাশা সেদিন সারারাত এই ঘটনা র কোনো একটা ঠিক সিধান্তে আসতে পারছিল না।

এদিকে আনবিক এর মৃত্যুর খবর ছোট শহরকে নাড়া দিয়েছিল এবং বিপাশা ওই দিন থেকে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল।
সে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে তার পুরানো বন্ধু চলে গেছে,যার সাথে সে ছোটো থেকে কতো সুন্দর মূহুর্ত কাটিয়েছে, সবরকম অবস্থা তেই তার পাশে ছিল আনবিক সে যেরকম ই পরিস্থিতি হোক না কেন!কিন্তু সে তার যোগ্য দাম কখনো দিতে পারিনি সে কখনো আনবিক কে জানাতে পারেনি সে তাকে মন থেকে চাইতো, সে জানতো তারা মনে মনে দুজনেই দুজন কে খুব ভালোবাসতো সম্মান করতো, কিন্তু সে নিজেকে অপরাধী মনে করেছিল যে সে তাকে বাঁচাতে কিছুই করতে পারেনি।তাছাড়া ও সে ডাক্তারের রিপোর্টে র কথাটাও মন থেকে মুছে ফেলতে পারছিল না।সে ভেবে দেখলো ছোট থেকেই আনবিক তার জন্য যে কোন বিপদ ই হোক না কেন কেউ পাশে না আসলে আনবিক সবসময়ই তার পাশে থেকেছে তাকে সবরকম ভাবে সাহায্য করেছে।সেদিন রাতেও আনবিক তার ভয়ের সঙ্গী হয়ে তাকে সাতে থেকেছে কিন্তু সে যে মানুষ টার সাথে এতো কথা বললো সে কি জীবিত ছিল না অন্যকিছু সে আর ভাবতে পারেনা বুকটা তার ভার হয়ে আসে চোখ ছলছল করে উঠে।

মাস কেটে যায়, এবং আনবিক হত্যার তদন্ত ঠান্ডা হয়ে যায়।
বিপাশা জীবনের নিয়মে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল,কিন্তু সেই রাতের স্মৃতি তাকে তাড়িয়েবেড়িয়েছে দিনের পর দিন।
সে প্রায়ই ভাবত যে সে যদি একা বাড়িতে হেঁটে যেতো,বা যদি সেদিন তাকে একা ছেড়ে না যেতো সাথে আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারতো তবে কী এমনটা হত?সেদিন ঠিক কোন ঘটনা টা আগে ঘঠেছিল আণবিক এর মৃত্যু না কি তার সাথে ভয়াবহ রাত কাটানো মূহুর্ত!
শেষ পর্যন্ত, বিপাশা জীবনের এই ঘটনা জীবনে মানুষ টার প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান বাড়িয়ে দেয় এমন কি আনবিক এর কাছে শুধু মুখ বুঝে তার সবসময় পাশে থাকা তাকে সাহায্য করা সত্যি এমন মানুষ সত্যি ই কি হতে পারে যে কিনা মৃত্যুর পরেও তার কর্তব্যের কথা ভুলে যায়নি তার এমন ভালো রেখে ভালোবাসা তার দাম টা সে কখনো দিতে পারবে না এই জীবনের ঋণের বোঝা নিয়ে তাকে বইতে হবে।বিপাশা আণবিক কখনও ভুলে যায়নি।কিন্তু জীবনের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কতক্ষণ ই বা একটা মৃত মানুষ কে মনে রাখতে পারে মানুষ?

              রাজু সরকার (11 April 2023)

No comments:

Post a Comment